জমি বর্তমান সময়ে সব চেয়ে বড় মূল্যবান সম্পদ। তার জন্য আজ আমাদের এই পোস্টে, আপনাকে জানাব অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার নিয়ম এবং জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম সমূহ।
বর্তমান সময়ে অনেক লোক আছে, যাদের নিজের নামে জমি আছে কিন্তু এখনও জানেন না। তাই আপনি যদি মনে করেন।
আপনার নামে কোন জমি আছে। তাহলে, অনলাইনের মাধ্যমে জেনে নিতে পারবেন, জমির মালিক কে এবং কত টুকু জমি আছে।
তাই আপনি যদি অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার উপায় জানতে চান।
তাহলে, আমাদের দেওয়া আর্টিকেল শেষ পর্যন্ত মনযোগ দিয়ে পড়ুন।
আমরা জানি, বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমির সকল সেবা এখন ডিজিটাল প্রযক্তির মাধ্যমে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তার ফলে জমির খতিয়ান বের করে নিতে কিংবা জমির মালিকানা বের করর উপায় অনেক সহজ হয়ে গেছে।
কারণ বর্তমান সময়ে অনলাইন ইন্টারনেটে সার্চ করেই তাৎক্ষনিক ভাবে জমির খতিয়ান এবং মালিকানা খুজে বের করা যায়।
আমরা জানি, অনেক লোকের বাবা মা, দাদা দাদি, মৃত্যুর আগে জমি/ ভূমি রেখে যান, কিন্তু তার ওয়ারিশগণ সেটি খুঁজে পায় না।
আবার দেখা যায় জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে গেলে দালাল এর হাতে পড়ে অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়।
তার জন্য আপনার যদি জমি/ ভূমি সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকা সত্ত্বেও নিজের বাবা মা, দাদা দাদির রেখে যাওয়া জমি/ ভূমির হিসাব নিজেই রাখতে পারবেন।
জমির মালিকানা এবং খতিয়ান বের করার আগে আপনাকে জানতে হবে খতিয়ান কি এবং কাকে বলে।
তো চলুন জমির মালিকানা বের করার উপায় জানতে নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করা যায়।
খতিয়ান ও পর্চা কি ?
খতিয়ান বলতে যা বুঝায় পর্চা বলতেও তাই। মানে খতিয়ান এবং পর্চা একই জিনিস।
যার নামে জমির খতিয়ান তার নামেই পর্চা। অনেক এলাকা বা গামে এটিকে বিভিন্ন নাম ধরে ডাকা হয়।
জমির মালিকানা প্রমাণ করার জন্যে সরকারি যে, দলিল রয়েছে তাকেই খতিয়ান বলা হয়।
আইন এর ভাষায় বলতে গেলে, সরকারি জমি জরিপ করার সময় জরিপ এর বিভিন্ন স্টেপ অতিক্রম করে চূড়ান্ত ভাবে বাংলাদেশের ফরম নং
আইনের ভাষায় বলতে গেলে, সরকারি ভাবে জমি জরিপ করার সময় জরিপের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে চূড়ান্ত ভাবে বাংলাদেশ ফরম ন: ৫৪৬২ (সংশোধিত) তে ভূমির মালিকানা, দাগ নং এর বর্ণনা সহ যে, নথি প্রকাশ করা হয়ে থাকে তাকেই খতিয়ান বলে।
নিচের ছবিটি দেখুন- তাহলে খতিয়ান সম্পর্কে বুঝতে পারবেন।
উপরে যে ছবিটি দেখতে পারছেন এটিই জমির খতিয়ান এবং এটিই জমির পর্চা।
যারা জমির পর্চা বা খতিয়ান চিনেন না। তাদের জন্য এই ছবিটি আমরা বুঝার সুবিধার্থে প্রস্তুত করেছি।
খতিয়ান-পর্চাতে যে বিষয় গুলো উল্লেখ থাকে ?
জমির খতিয়ানে জমির মালিকানা সহ আরো অনেক বিষয়ে উল্লেখ থাকে। সেগুলো হলো-
- দান নং, মৌজা নং, খতিয়ান নং, বাট্রা নং, এরিয়া নং।
- জমির দখলদার এর নাম, ঠিকানা, পিতার নাম, মাতার নাম ইত্যাদি।
- দখলকা এর জমির অবস্থা, কত শতাংশ জমি এবং জমির সিমানা।
- জমির মালিক এর নাম, ঠিকানা ও পিতার নাম।
- খতিয়ান তৈরি করার সময় খাজনার পরিমাণ ও 28,29,30 বিধি মোতাবেক নির্ধারিত খাজনা উল্লেখ করা থাকে।
- খাজনা বৃদ্ধির কারণ থাকলে তার বিবরণ দেওয়া থাকে।
- ২৬ ধারা মোতাবেক নির্ধার্তি খাজনা।
- নিজস্ব জমি/ভূমি হলে তার বিবরণ।
- এছাড়া, ইজারা কৃত জমির জন্য জমি মালিক এর অধিকার ইত্যাদি উল্লেখ করা থাকে।
খতিয়ান কত প্রকার ?
একটি খতিয়ানের বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। বাংলাদেশের জমি/ভূমির কার্যক্রমে চার প্রকার খতিয়ান আছে। যেমন-
- সিএস খতিয়ান
- এসএ খতিয়ান
- আরএস খতিয়ান
- বিএস খতিয়ান
বিস্তারিত দেখুনঃ
- সিএস খতিয়ান- 1940 সালে ব্রিটিশ শাসন আমল সরকার জরিপ এর মাধ্যমে যে, খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়েছিল তাকে বলা হয় সিএস খতিয়ান।
- এসএ খতিয়ান- 1950 সালে রাষ্ট্রিয় অধিকার গ্রহণ আইন 27-31 ধারা অনুযায়ী 1956 সাল থেকে 1960 সাল এ যে, খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়েছিল তাকে বলা হয় এসএ খতিয়ান।
- আরএস খতিয়ান- বাংলাদেশের সরকার 144 ধারা যে খতিয়ান প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাকেই আরএস খতিয়ান বলা হয়।
- বিএস খতিয়ান- 1998 সাল ও 1999 সাল হইতে চলমান জরিপ কে বিএএস খতিয়ান বলা হয়। বর্তমান সময়ে এই খতিয়ান বাংলাদেশে চলমান আছে।
অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার উপায়
বর্তমান সময়ে জমির মালিকানা জানার জন্য, আপনি দুইটি উপায় ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন-
আপনার খতিয়ান সম্পর্কে যদি আপনার কোন সন্দেহ থাকে। তাহলে নিকটস্থ ভূমি অফিসে গিয়ে খতিয়ান এর ভলিউম দেখে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আপনার যদি খতিয়ন এর মিল থাকে তাহলে, আপনার খতিয়ান সঠিক আছে। যদি মিল না থাকে তাহলে আপনার সাথে জালিয়াতি করা হয়েছে মনে করবেন।
অনলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকানা বের করার উপায়। অনলাইনে জমির মালিকানা জানার জন্য আপনার দরকার হবে, একটি স্মার্ট মোবাইল এবং ইন্টারনেট কানেকশন।
তারপরে আপনাকে ভূমি রেকর্ড এবং জরিপ অধিদপ্তরের সরকারি ওয়েবসাইটে http://www.dlrs.gov.bd/site/view/notices প্রবেশ করতে হবে।
তারপরে, খতিয়ান তথ্য অনুসন্ধান অপশনে গিয়ে নিধারিত ফরম পূরণ করে আপনার খতিয়ান দেখে নিতে পারবেন।
জমির মালিকানা বের করা কেন প্রয়োজন ?
আপনারা যখন জমি ক্রয় করবেন, তখন আপনাকে জানতে হবে জমির সঠিক মালিক কে।
তার কারণ হলো বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে প্রতারক এর অভাব নাই।
প্রতারক লোকেরা জমির নকল মালিক সেজে জমি বিক্রি করার প্রতারণা করে থাকে, বা করতে পারে।
এছাড়া জমির ঝামেলা মেটানোর জন্য জমির মালিকানা বের করা অনেক জরুরী একটি কাজ।
এবং আপনি যে, জমিটি ক্রয় করবেন, সেটি মৃত ব্যক্তির মালিকানা যাচাই করে নিবেন।
যদি কোন ওয়ারিশ থাকে তাহলে জমি ক্রয় করার পরে, আপনাকে সেই ওয়ারিশগণ জমির দখল নাউ দিতে পারে। তাই আপনাকে জমির মালিকা ও ওয়ারিশ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে হবে।
তো বন্ধুরা, আপনি উক্ত আলোচনা থেকে জানতে পারলেন, অনলাইনে জমির মালিকান বের করার নিয়ম সম্পর্কে।
আপনি যদি নিজরে জমি বা ক্রয় করার আগে জমির মালিকানার বিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে চান।
তাহলে আপনাকে উক্ত নিয়ম গুলো অনুসরণ করে অনলাইনে জমির মালিকানা জেনে নিতে হবে।
এছাড়া অফলাইনে জমির মালিকানা এবং খতিয়ান-পর্চা সম্পর্কে জানতে নিকটস্থ এলাকা থেকে জমির মালিকানা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন।
শেষ কথাঃ
তো বন্ধুরা, আমাদের এই পোস্টে আপনাকে জানানো হলো- অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার উপায় সম্পর্কে।
আপনি যদি জমির বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। তাহলে উক্ত অনলাইন লিংকে ক্লিক করে, জমি সংক্রান্ত সকল তথ্য জেনে নিন।
আমাদের আর্টিকেল আপনার কাছে কেমন লাগলো একটি কমেন্ট করে জানাবেন। এছাড়া এই আর্টিকেল টি আপনার পরিচিত দের জনাতে একটি শেয়ার করুন।
আমাদের আর্টিকেল শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
0 comments