ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে একটি মাঠ কাপানো কাজ। সকল তরুন আবার অনেক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষও টাকা ইনকাম এর জন্য এর পিছনে ছুটে চলেছে। ছুটে চলেছে নিজের ভাগ্য বদলাতে। তাহলে আপনি কেন পিছিয়ে থাকবেন? আর পিছিয়ে থাকতে হবে না। আপনাকে সামনে এগুনোর জন্য এবার পা বাড়াতেই হবে।
তো আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কি?, কিভাবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হবেন, ফ্রিল্যান্সিং অ্যাকাউন্ট কি?, কিভাবে ভালো ফ্রিল্যান্সিং অ্যাকাউন্ট তৈরি করবেন সে সমন্ধে। চলুন শুরু করা যাক।
অনলাইন মার্কেটপ্লেস কি?
অনলাইন মার্কেটপ্লেস বা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হলো মূলত ফ্রিল্যান্সিং এর জায়গা। আপনার কাজ যেমন আপনি অফিসে পেয়ে থাকেন তেমনি ফ্রিল্যান্সাররাও তাদের এই কাজগুলো এই মার্কেটপ্লেসে পেয়ে থাকে। কাজের উপর ভিত্তি করে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের কাজগুলো এখানে পোস্ট করে।
আবার অনেক অনলাইন মার্কেটপ্লেস আছে যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা বায়ার এর পোস্টে বিড করে কাজ নেয়। এর উপর ভিত্তি করেই অনেক মার্কেটপ্লেস আজ আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে। তারই জনপ্রিয় কিছু অনলাইন মার্কেটপ্লেস হলোঃ
- ফাইভারঃ বিগিনারদের জন্য সবচেয়ে উত্তম মার্কেটপ্লেস বলে পরিগণিত। গিগ সেবার জন্য বিখ্যাত।
- ফ্রিল্যান্সার ঃ কন্টেস্ট এবং বিড করে কাজ নিতে পারবেন এখান থেকে। কন্টেস্ট এর জন্য ইউনিক হিসাবে খ্যাত।
- আপওয়ার্কঃ আপওয়ার্ক থেকেও আপনি বিড করেই কাজ নিতে পারবেন।
- পিপল পার আওয়ার ঃ পার্টটাইম জব হিসাবে নিতে চাইলে এই মার্কেটপ্লেসটি অন্যতম।
- গুরু ডট কম ঃ ভারতের অন্যতম ও জনপ্রিয় একটি মার্কেটপ্লেস হিসাবে খ্যাত।
আশা করি অনলাইন মার্কেটপ্লেস সমন্ধে আপনার ধারণা পরিষ্কার হয়েছে।
কিভাবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হবেন?
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার যদি আপনি হতে চান তবে কিছু বিষয় অবশ্যই আপনাকে মেনে চলতে হবে। আর একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য আপনাকে পূর্ব থেকেই কিছু জিনিস মেনে চলতে হবে এবং কাজ শুরু করার পরে কিছু বিষয় যুক্ত করতে হবে। তাই কিভাবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হবেন এই পয়েন্টকে আমরা দুটো ভাগে ভাগ করে নিয়েছি। একটি হলো পূর্বের করণীয় এবং পরে যা মেনে চলতে হবে। চলুন একটু দেখে নেয়া যাক।
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে গেলে পূর্বের করণীয়ঃ
সময় নিয়ে কাজ শিখুনঃ
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে আপনাকে প্রথমেই যে কথাটি মাথায় রাখতে হবে তা হলো নিজের ব্যাসিক বা ভিত্তিটাকে মজবুত করে নিতে হবে।কেননা এই ভিত্তি মজবুত না হলে পরবর্তীতে কাজ করতে যেয়ে বিপুল ঝামেলা তৈরি হবে। আর এই ব্যাসিকটাকে মজবুত করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো সময় নিয়ে কাজ শেখা।
সময় নিয়ে কাজ শেখার ব্যাপারটি কেন আনলাম তা একটু বলে নিই। বর্তমানে অনেক নতুন ফ্রিল্যান্সারদের আপনি দেখবেন যে তারা টাকা ইনকামের মোহে পড়ে কাজ যে ভালোভাবে শিখতে হবে সেই জিনিসটাই ভুলে যায়। ফলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে গিয়ে তারা চোখে ধোঁয়াশা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পারে না।
তাই আপনি যদি নিজের ক্ষেত্রে এমনটি না চান তবে আপনাকে অবশ্যই একটু বেশি সময় নিয়েই নিজের ব্যাসিককে মজবুত করে বানাতে হবে। আর হ্যাঁ, সময় বেশির মানে এই না যে হেল ফেলা করে কাজ শিখবেন। বরং মনে রাখবেন আপনাকে সময় বেশি দেয়া হচ্ছে এ কারণেই যে আপনি যাতে ভালো করে মনযোগ দিয়ে কাজ করতে পারেন।
তাহলে এখানে দুটো বিষয় পাওয়া গেলো । তা হলোঃ
- ১। সময় নিয়ে কাজ শিখতে হবে
- ২। মনযোগ দিয়ে কাজ শিখতে হবে
কিভাবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হবেন তার প্রাথমিক ধাপ কিন্তু এটাই। আশা করি বুঝেছেন।
সফল একজন ফ্রিল্যান্সার এর অধীনে কিছু দিন কাজ করুনঃ
কাজ শেখা শেষ। এখন কি সরাসরি কাজে লেগে পড়বেন?
হ্যাঁ, আপনি এখন কাজে লেগে পড়তেই পারেন তবে তা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়া হবে না আমি যা মনে করি। মনযোগ দিয়ে কাজ শেখার পাশাপাশি আপনাকে অভিজ্ঞতা অর্জনেও নজড় দিতে হবে খুব ভালোভাবে। কেননা অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতা এ দুইয়ের সমন্বয়েই কেবল একটি ভালো ফ্রিল্যান্সিং অ্যাকাউন্ট আপনি তৈরি করতে পারবেন।
আর একজন ভালো ফ্রিল্যান্সার হতে গেলে অভিজ্ঞতা অর্জনটাও বেশ জরুরি। কারণ অনেক সময় ফ্রিল্যান্সরা অনেক বেশি হেনস্তার শিকার হয়ে থাকে নতুন হওয়ার কারণে। অনেক ভণ্ড বায়ার অনেক কম রেটেই কাজ করিয়ে নেয়। আর দুর্ভাগ্যবশত ফ্রিল্যান্সাররা তা বুঝতেও সক্ষম হয় না।
তাই আমার ব্যক্তিগত মতামত যদি আপনি শুনতেই চান তাহলে বলব আপনাকে অবশ্যই একজন সফল ফ্রিল্যান্সার এর আন্ডারে কিছুদিন যাবত কাজ করুন। এতে করে খুব সহজেই এমন ধোঁকা থেকে বেড়ুতে পারবেন।
কিভাবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হবেন তার পরের করণীয়ঃ
এবার আমরা যে জিনিসটা নিয়ে আলোচনা করব তা হলো একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে কাজের সময় বা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এ ঢোকার পর আপনার করণীয় কি হবে। নিচে তা একটু সিরিয়াল মেনে তালিকাভুক্ত করা হলোঃ
- ১. ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস নিয়ে গবেষণা করাঃ কোথায় কোন কাজের চাহিদা বেশি। মার্কেটপ্লেসে একটু ঝেকে ঝেকে দেখুন কোথায় কেমন কাজের চাহিদা। সফল ফ্রিল্যান্সার দের মূল কাজটা কিন্তু এই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ই। তাই আপনি যত ভালোভাবে তা বুঝতে পারবেন ততই আপনার জন্য ভালো।
- ২. ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এ একটি মানসম্মত প্রোফাইল খোলা। একটি ভালোমানের প্রোফাইল খুলুন। একটু পরেই আমরা তা নিয়ে আলোচনা করব।
- ৩. ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এ ডেইলী কাজের জন্য বিড করা বা গিগ পোস্ট। সফল একজন ফ্রিল্যান্সার হতে হলে প্রতি নিয়তই আপনাকে কাজের পোস্ট করতে হবে। সেই সাথে বায়ার এর কাজের পোস্টে কমেন্ট বা বিড করতে হবে।
- ৪. বায়ার এর সাথে যোগাযোগ ঠিক রাখা ও ঠিক সময়ে জমা দেয়া। ভালো পোর্টফলিও তৈরি করতে হলে আপনাকে বায়ার এর সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। আর আপনার ফ্রিল্যান্সিং অ্যাকাউন্টে ভালো রিভিউ আনতে সঠিক সময়েই কাজ দিতে হবে।
- ৫. কাজে গাফিলতি না দেখানোঃ সফল একজন ফ্রিল্যান্সার হতে হলে আপনাকে অবশ্যই কাজে গাফিলতি দেখানো যাবে না। কেননা এতে করে রিভিউ কম আসবে। আর আপনার ক্যারিয়ার ধংস হওয়ারও চান্স থাকে।
উপরোক্ত পয়েন্টগুলোতে কিভাবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হবেন সে নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আশা করি তা মানলেই আপনি একজন ভালো ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন যার হাতে থাকবে ভালো একটি ফ্রিল্যান্সিং অ্যাকাউন্ট।
এ পর্যায়ে আমরা একটু তাড়াতাড়ি কাজ পাওয়ার টিপস নিয়ে আলোচনা করব। চলুন শুরু করা যাক।
খুব তাড়াতাড়ি কাজ পেতে হলে যা যা করতে হবে?
এ পর্যায়ে আমরা খুব তাড়াতাড়ি কাজ পাওয়ার কিছু পয়েন্ট আলোচনা করব যার মাধ্যমে সফল ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন আপনি। নিচে পয়েন্ট আলোচনা করা হলোঃ
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এ পরিচ্ছন্ন প্রোফাইলঃ
আপনার ভালো কাজের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটা তা হলো।একটি স্বচ্ছ প্রোফাইল থাকা। হ্যা আপনাকে আপনার কাজের একটু স্বচ্ছ প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। যাতে থাকবে আপনার কাজের নমুনা আপনার পোর্টফলিও ও যাবতীয় সকল কিছু। এখন আসা যাক একটি স্বচ্ছ প্রোফাইল কেন প্রয়োজন। আসলে বায়ার কিন্তু আপনাকে কাজ দেয়ার আগে আপনার সম্পর্কে জানতে চাইবে। আর এই জানার সবচেয়ে ভালো মাধ্যমটাই কিন্তু স্বচ্ছ একটা প্রোফাইল। প্রোফাইলে আপনি সকল কিছু ঠিকঠাক মতো সাজাতে পারলেই কাজ পাওয়ার চান্স অনেকগুণ বেড়ে যাবে।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এ কিভাবে একটি স্বচ্ছ ফ্রিল্যান্সিং অ্যাকাউন্ট তৈরি করবেন?
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এ স্বচ্ছ এবং একটি ভালো একটি ফ্রিল্যান্সিং অ্যাকাউন্ট এ কি কি থাকা দরকার তা কোনো টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার এর প্রোফাইল থেকে জেনে নিন। তারপর সেই জিনিসগুলো নিজের মতো করে প্রোফাইলে সাজিয়ে ফেলুন। তবে মনে রাখবেন এমন কিছু যুক্ত করবেন না যা আপনি জানেন না।
এতে করে হেনস্তার শিকার হতে পারেন খুব সহজেই। তাই মাথায় রাখবেন যেন স্বচ্ছ প্রোফাইলে ভুল ভাল কিছু দিয়ে যেন কাদামাটা না করে ফেলেন। আশা করি এটা মানলেই সফল ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং অ্যাকাউন্ট এর পোর্টফোলিওঃ
আপনার প্রোফাইল এর অনেক বড় একটা অংশ জুড়ে কিন্তু থাকবে আপনার পোর্টফলিও। বলা যায় আপনার সম্পর্কে জানার জন্য একজন বায়ার বা ক্লায়েন্ট সর্ব প্রথম আপনার পোর্টফলিও বা পূর্বের কাজের ইতিহাসই চেক করবেন। প্রোফাইল ভালো হওয়ার ৮০% ই মূলত এই পোর্টফলিও এর উপর নির্ভর করে।
তাই যত ভালো পোর্টফলিও হবে আপনার ততই সুবিধা। পাশাপাশি কাজ পাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি।
আর পোর্টফলিও যুক্ত করার সময় যে জিনিস মাথায় রাখতে হবে তা হলো ৮-১০ টি পোর্টফলিও যুক্ত করা একটি প্রোফাইল এর জন্য যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি যুক্ত করলে আপনার প্রোফাইল ঘেটে ঘ হয়ে যেতে পারে।
তাই মার্জিত প্রোফাইল রাখতে পর্যাপ্ত পোর্টফলিও রাখুন তার বেশি নয়। আরেকটি বিষয় এখানে আছে তা হলো আপনাকে অন্য কারোর পোর্ট ফলিও দেয়া যাবে না। বা নিম্নমানের কোনো কাজের পোর্টফলিও যুক্ত করবেন না।
এতে করে বায়ার আগেই নিরুতসাহিত হবেন। তাই মাথায় রাখবেন পোর্টফলিও এর কথা। বেশি কিংবা কম দেয়া যাবে না আবার ভুলভালও দেয়া যাবে না।
সঠিক কাজের রেটঃ
নতুন অবস্থায় অনেকেই এই ভুলটা সচরাচর করেই থাকেন। আর তা হলো সঠিক কাজের রেট ঠিক করে নিতে পারে না। অনেকে উত্তেজনার বশীভূত হয়ে বেশি পরিমাণ টাকা চায়। ফলে ক্লায়েন্ট বা বায়ার যাই বলি না কেন তারা আর আগাতে চান না। আর কাজটিও পাওয়া হয়ে উঠে না।
অপরদিকে অনেকেই আছে একেবারেই লো রেটে কাজ করতে চান। এর ফলে ক্লায়েন্ট ভাবে প্রার্থীর কাজের মান মনে হয় বেশি একটা ভাল না। সেক্ষেত্রেও এক ঝামেলা দিয়ে যেতে হয়।
দেখা যাচ্ছে যে বেশি চান কিংবা কম চান উভয়েই সমস্যা। সেক্ষেত্রে ক করবেন?
সেক্ষেত্রে আপনাকে স্ট্যান্ডার্ড রেট সম্পর্কে জানতে হবে। আর ক্লায়েন্ট এর প্রোফাইল থেকে জেনে নবেন তিনি কত দিয়ে কাজ করিয়েছেন। এতে করে আপনার কাজ সমন্ধে এবং তার রেট সমন্ধে একটি ভালো ধারণা তৈরি হবে। তাই রেট এর বিষয়টি অবশ্যই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। তা না হলে পস্তাতে হবে।
ইম্প্রেশনঃ
এটা জানা কথা যে কেউ আপনার প্রতি আকৃষ্ট না হলে সে আপনাকে কাজ দিবে না। তাই আপনার প্রথম টার্গেট হতে হবে কিভাবে ক্লায়েন্টকে আকৃষ্ট করা যায় বা ইম্প্রেস করা যায়। এক্ষেত্রে আপনি একটি সহজ কাজ করতে পারেন। আপনার এমন কিছু সূক্ষ্ম কাজের নমুন বা স্যাম্পল আপনার ক্লায়েন্টকে দেখান যা তাকে সহজেই আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে। ফলে আপনার কাজটিও অনেকটা সহজ হবে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা আজ জানলাম কিভাবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হবেন সে বিষয়ে। সেই সাথে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কি, ফ্রিল্যান্সিং অ্যাকাউন্ট কি ও ভালো ফ্রিল্যান্সিং অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পদ্ধতি সম্পর্কেও জেনেছি। আশা করি এই টপিকগুলো আপনাকে সঠিক ধারণা দিতে সক্ষ্ম হবে। আর তা মেনে চললে আপনিও সাফল্যের মুখ অতি শিঘ্রই দেখতে পারবেন। এ রকম পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। দেখা হচ্ছে পরবর্তী পোস্টে।
1 comments
Ibrahim Sep 24,2022
hotovaga.com/blog/online-marketplace-ki/3761